মীরসরাইর জোরারগঞ্জ থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ২৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ মেরিন ড্রাইভ সড়ক নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। জোরারগঞ্জ থেকে শুরু করে মীরসরাই–সীতাকুণ্ডের উপকূলীয় বেড়িবাঁধ ধরে বঙ্গবন্ধু টানেল ব্যবহার করে কর্ণফুলী নদীর অপর পাড়ে এবং সেখান থেকে বাঁশখালী ও চকরিয়া হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত যাবে সড়কটি। কর্ণফুলীর তলদেশে টানেল ব্যবহার করা হলেও মাতামুহুরিসহ অন্যান্য নদীগুলোর উপর ব্রিজ নির্মাণ করা হবে। নানা আনুষ্ঠানিকতা শেষে গত ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে প্রকল্পটির সার্ভে শুরু হয়েছে। অস্ট্রেলিয়ান একটি কোম্পানি এই সার্ভে কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা গতিশীল করে শিল্পায়ন, পর্যটন এবং আবাসনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনার লক্ষ্যে মীরসরাইর জোরারগঞ্জ থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ২৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই মেরিন ড্রাইভ নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। একই সাথে এটিকে কক্সবাজার টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের সাথে যুক্ত করে দেয়া হবে। এতে মীরসরাইর জোরারগঞ্জ থেকে টেকনাফ পর্যন্ত ৩১০ কিলোমিটার মেরিন ড্রাইভ প্রস্তুত হবে। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। মীরসরাইর জোরারগঞ্জ থেকে মুহুরি প্রজেক্ট হয়ে মেরিন ড্রাইভ শুরু হবে। এটি দেশের বৃহত্তম অর্থনৈতিক অঞ্চল মীরসরাই ইকোনমিক জোনকে যুক্ত করবে। মীরসরাই থেকে সীতাকুণ্ড হয়ে মেরিন ড্রাইভে ফৌজদারহাট দিয়ে পতেঙ্গা হয়ে কর্ণফুলীর তলদেশের টানেল ব্যবহার করবে। টানেলের অপর পাড়ের আনোয়ারা থেকে বাঁশখালী এবং চকরিয়া হয়ে মেরিন ড্রাইভ পৌঁছবে কক্সবাজারের কলাতলীতে। সেখানে কক্সবাজার টেকনাফ মেরিন ড্রাইভে গিয়ে সেটি যুক্ত হবে। জোরারগঞ্জ থেকে শুরু করে কক্সবাজার পর্যন্ত মেরিন ড্রাইভ হবে চার লেনের। এটি সমুদ্রের জোয়ার রেখা থেকে ১৫ ফুট উচ্চতায় থাকবে।
সড়ক ও জনপথ বিভাগের শীর্ষ একজন কর্মকর্তা গতকাল দৈনিক আজাদী বলেন, মীরসরাই মুহুরি প্রকল্প থেকে নেভাল একাডেমির কাছে টানেল হয়ে চাতরী–চৌমুহনী, বাঁশখালী–পেকুয়া–চৌফলদন্ডী–খুরুশকুল সমুদ্র উপকূল হয়ে কক্সবাজার শহরের কলাতলী মেরিন ড্রাইভ সড়ক পর্যন্ত ২৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ চার লেনের রাস্তাটি নির্মিত হবে। চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সড়ক বিভাগ পৃথক পৃথকভাবে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। এরমধ্যে চট্টগ্রাম অংশে রাস্তার পরিমাণ হবে ৮০ কিলোমিটার এবং কক্সবাজার অংশে ১৫০ কিলোমিটার। কক্সবাজার থেকে টেকনাফের ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ মেরিন ড্রাইভের সাথে যুক্ত হলে এটি হবে পৃথিবীর সবচেয়ে দীর্ঘ মেরিন ড্রাইভ।
প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের সম্ভাবনার দুয়ার খুলে যাবে মন্তব্য করে সংশ্লিষ্ট একজন বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী বলেন, প্রকল্পটির সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর জন্য সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে নানাভাবে নির্দেশনা প্রদান করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে এই মেরিন ড্রাইভের অংশ হিসেবে মীরসরাই অর্থনৈতিক জোন এলাকায় ৮ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ শুরু হয়েছে। এই আট কিলোমিটার সড়ক পরবর্তীতে মেরিন ড্রাইভের অংশ হয়ে যাবে।
২৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ মেরিন ড্রাইভ নির্মাণের ব্যাপারে সার্ভে পরিচালনা করার জন্য গত ২৬ আগস্ট অস্ট্রেলিয়ার এসএমইসি নামের একটি কোম্পানির সাথে চুক্তি করা হয়েছে। এই চুক্তির আলোকে গত ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে বিদেশি এই কোম্পানি সার্ভে কার্যক্রম শুরু করেছে। মীরসরাই অংশ থেকে তারা সার্ভে করছে বলে সড়ক ও জনপথ বিভাগের শীর্ষ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। বিদেশি এই প্রতিষ্ঠানকে প্রায় নয় কোটি টাকায় এই সার্ভে কার্যক্রম পরিচালনার কাজটি দেয়া হয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানের রিপোর্টের ভিত্তিতে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে সূত্র জানিয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে গতকাল সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জুলফিকার আহমেদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি মেরিন ড্রাইভ প্রকল্পের সার্ভে কার্যক্রম শুরু হওয়ার কথা নিশ্চিত করেন।